সালাত তথা নামাজ আদায় করা প্রতিটি মুমিন মুসলমানের দায়িত্ব। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য। যেন বান্দা তারই ইবাদত করে। সকল কাজে তারই অভিমুখী হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন: وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُون অর্থাৎ, আমি মানুষ এবং জ্বীনদেরকে আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি। ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছ নামাজ। নামাজ মুমিন এবং কাফেরদের মাঝে পার্থক্য করে দেয়। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন: حٰفِظُوْا عَلَى الصَّلٰوتِ وَالصَّلٰوةِ الْوُسْطٰىْ وَقُوْمُوْا لِلّٰهِ قٰنِتِيْنَ অর্থাৎ, জাগ দৃষ্টি রেখ সমস্ত নামাযের প্রতি এবং মধ্যবর্তী নামাযের প্রতি। আর আল্লাহর সামনে আদব সহকারে দাড়াও। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৩৮)
এর দ্বারা নামাজের গুরুত্ব বুঝে আসে। আছরের নামাজ আদায় করার নিয়ম এবং রাকাত সংখ্যা নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আছরের নামাজ কত রাকাত ও কি কি
আছরের ফজর নামাজ চার রাকাত। তবে আছরের নামাজের পূর্বে চার রাকাত নামাজ আদায় সুন্নতে গাইরে মুওয়াক্কাদাহ্। অন্যান্য নামাজ যেমনি ভাবে ধারাবাহিকভাবে আদায় করতে হয়। ঠিক তেমনিভাবে আছরের নামাজও ধারাবাহিকভাবে আদায় করতে হয়। প্রথমে চার রাকাত সুন্নত পড়বে। এরপর চার রাকাত ফরজ পড়বে। আছরের ফরজ নামাজের পূর্বে চার রাকাত সুন্নত পড়ার বাধ্যবাধকতা নেই। কেউ চাইলে পড়তে পারে আবার না চাইলে নাও পড়তে পারে।
আরো পড়ুন: ফজরের নামাজ কয় রাকাত ও কিভাবে পড়তে হয়
আছরের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়
পাক পবিত্র অবস্থায় জায়নামাজে দাড়িয়ে নিয়ত করতে হয়। নিয়ত বাংলাতেও করা যায়। আরবিতে নিয়ত করাটা আবশ্যক নয়। যদি ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করে, তাহলে এভাবে নিয়ত করবে: আমি আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে আছরের চার রাকাত নামাজ এই ইমামের পিছনে আদায় করার নিয়ত করছি। আর যদি একাকী নামাজ আদায় করে তাহলে এভাবে নিয়ত করবে: আমি আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে আছরের চার রাকাত নামাজ আদায় করার নিয়ত করছি।
এরপর আল্লাহু আকবর বলে পুরুষগণ নাভির নিচে আর মহিলাগণ নাভির নিচে হাত বেঁধে ছানা পাঠ করবে। এরপর সূরা ফাতিহা পাঠ করবে এবং অন্য আরেকটি সূরা পাঠ করবে। জোহরের নামাজের আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্ক বিস্তারিত আলোচনায় বলেছিলাম: ইমামের পিছনে মুক্তাদি সূরা ফাতেহা বা অন্য কোনো সূরা পাঠ করবে না। প্রতিটি নামাজেই ইমামের পিছনে মুক্তাদিগণ কুরআন তেলাওয়াত থেকে বিরত থাকবেন। সূরার মিলানোর পর তাকবীর তথা আল্লাহু আকবর বলে রুকুতে যাবে। রুকুতে গিয়ে ”সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম” দোয়াটি তিন বার, পাঁচ বার, সাত বার বা বিজোড় সংখ্যায় পাঠ করবে। এরপর سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ) বলে রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে এবং رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (রব্বানা লাকাল হামদ) পাঠ করবে। যদি একাকী নামাজ আদায় করে তাহলে উভয়টি পড়বে। আজ যদি ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করে তাহলে শুধু رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ পাঠ করবে। এরপর “আল্লাহু আকবর” বলে সেজদা দিবে।
সেজদায় “সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা” এই দোয়াটি তিন বার, পাঁচ বার, সাত বার বা বিজোড় সংখ্যায় পাঠ করবে। এভাবে দুইটি সেজদা করবে। দুই সিজদার মাঝে এক তাসবীহ পাঠের সময় পরিমাণ বসবে। উল্লিখিত পদ্ধতিতে প্রথম রাকাত শেষ করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে। দ্বিতীয় রাকাত প্রথম রাকাতের মতই আদায় করবে। দ্বিতীয় রাকাতের দ্বিতীয় সেজদার পরে বসবে। বসার পর আত্তাহিয়াতু পাঠ করবে ।
আরো পড়ুন: যোহরের নামাজ কয় রাকাত ও কিভাবে পড়তে হয়
আত্তাহিয়াতু [তাশাহুদ]
– اَلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ. السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ. أَشْهَدُ أَن لَّاإِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
বাংলা উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু, ওয়াত্ তাইয়িবাত। আস্সালামু ‘আলাইকা আইয়্যুহান নাবীয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আস্সালামু ‘আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন। আশহাদু আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আননা মুহাম্মাদান আদুহু ওয়া রাসুলুহু।
আত্তাহিয়াতু পাঠ করার পর তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে। তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকাতদ্বয় প্রথম রাকাতের মত আদায় করবে। অর্থাৎ প্রথম সূরা ফাতিহা পাঠ করে সাথে অন্য সূরা মিলাবে, রুকু করবে, রুকুতে দোয়া পড়বে, রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবে এরপর সেজদা করবে।
চতুর্থ রাকাতে দ্বিতীয় সেজদার পর আখেরী বৈঠকে বসে আত্তাহিয়াতু, দরুদ শরীফ এবং দোয়ায়ে মাছুরা পাঠ করবে। এরপর সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করবে। এভাবে আছরের নামাজ আদায় করতে হয়।