বন্ধুরা যারা কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খান তাদের ওজন বাড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার আমরা সবাই খাই তবে যারা বেশি খায় তাদেরই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন ভাত, আমাদের মধ্যে যারা প্রচুর পরিমাণে ভাত খায় তাদের ওজন বেড়ে যায়, আপনারা এই বিষয়টা ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখতে পারেন। তাছাড়া অন্যান্য কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যেমন; আলু, দুধ, রুটি,সফট ড্রিংকস এবং এনার্জি ড্রিংকস ইত্যাদি।
বংশগত কারণ
বন্ধুরা এতক্ষণে হয়তো অনেকে বলতে পারেন যে নিয়ম মেনে চলার পরেও দেখেছি অনেকেরই ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে। হ্যাঁ, এরকম হওয়ার কারণ হল বংশগত দ্বারা। আপনাদের পরিবারের কেউ অথবা বংশের কারোর যদি ওজন বৃদ্ধির এই রোগটি থেকে থাকে তাহলে আপনাদেরও এরকম হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কারন- আমরা সবাই জানি যে আমরা কিছু কিছু জিনিস বংশগতভাবে পেয়ে থাকি।
বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে
বন্ধুরা রোগ জীবাণুর মধ্যে অনেক রোগ আছে যেগুলা আমাদের ওজন বৃদ্ধি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন- ইনসুলিন, পলিস্টিক ডিম্বাশয়, ডায়াবেটিস, কুশিং সিনড্রোম, হাইপোথাইরয়েডিজম ইত্যাদি রোগের ফলে আমাদের শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের রোগ আছে যেগুলা আমাদের শরীরের ওজন বাড়াতে পারে। তাই এসব বিষয়ে আগে থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে বেশি উত্তম।
বিভিন্ন ধরনের ঔষধ
আমরা আমাদের ট্রিটমেন্টের জন্য অসংখ্য প্রকার ওষুধ খেয়ে থাকি। এই ওষুধগুলো রাবার আলাদা আলাদা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থাকে। যার মধ্যে অনেক ঔষধ আছে যেগুলা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আমরা অনেকেই আছি বিভিন্ন ধরনের ঔষধ প্রতিদিন নিয়মিত আমাদের ট্রিটমেন্টের জন্য ব্যবহার করি। ওষুধগুলো চর্বি থাকার কারণে আমাদের শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়।
অতিরিক্ত ওজনের ক্ষতিকর প্রভাবঃ
বন্ধুরা ওজন বৃদ্ধির কারণ এতক্ষণে আপনারা জানতে পেরেছেন। অতিরিক্ত ওজনের কারণে আমাদের শরীরের শুধু সৌন্দর্য নষ্ট হয় না আরো বিভিন্ন ধরনের রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাঁধতে থাকে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে আমাদের নানান প্রকার সমস্যা হয়ে থাকে তার মধ্যে রোগ-জীবাণুর পরিমাণ বেশি থাকে। এখন আমরা বেশি ওজন বাড়ার কারণে বড় ধরনের কয়েকটি রোগের কথা বলবো।
হার্ট অ্যাটাক
বন্ধুরা আমরা জানতে পেরেছি যে অতিরিক্ত ওজন বাড়ার কারণে আমাদের দেহে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়। এগুলো আবার হার্টের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে থাকে। আমাদের হৃদপিন্ডে সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক সিস্টেম আছে তা মাধ্যমে আমাদের হৃদপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন করে থাকে। যেসব ছিদ্র দিয়ে রক্ত আমাদের হৃদপিন্ডেহ প্রবেশ করে এবং বাইরে বের হয় সেই ছিদ্রপথে চর্বি জমে যায়। চর্বি ছিদ্রপদগুলোতে আস্তে আস্তে জমতে জমতে রক্তনালীগুলোকে বন্ধ করে দেয়। রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে আমাদের হার্টবিট কাজ করা বন্ধ করে দেয় আর এই সময়টাকে আমরা হার্ডএটাক বলে থাকি। হার্ট অ্যাটাকের কারণ শরীরের ওজন বারা সেটা আমরা উপরেই জেনে এসেছি। তাই আমাদের করণীয় ওজন বৃদ্ধি কমাতে সকল উপায় মেনে চলা।

চলাফেরায় সমস্যাঃ
বন্ধুরা আপনাদের মধ্যে যাদের ওজন বেশি তারা হয়তো এই সমস্যাটায় সবচেয়ে বেশি ভোগেন। আসলে মোটা শরীর নিয়ে চলাফেরা করা অনেকটা কষ্টদায়ক হয়ে পড়ে। একজন সুস্থ মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত হাঁটাচলা করতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনোভাবেই একজন মোটা মানুষের হাঁটার সম্ভব নয়। তাছাড়া যেকোন প্রকার কাজ একজন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষ স্বাভাবিকভাবে করতে পারবে। কিন্তু ওজন বেশি ওয়ালা মানুষের পক্ষে খুবই মুশকিল হয়ে পড়বে। যার জন্য ওজন বেশি ওয়ালা মানুষের হাঁপানির সৃষ্টি হয় হাটা চলা করতে গেলে। তাই ওজন কমানোর উপায় গুলো নিয়মমাফিক মেনে চললে এরকম হাজারো সমস্যা থেকে উপায় পাওয়া যাবে।
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি সমস্যাঃ
বন্ধুরা একজন অতিরিক্ত ওজন বিশিষ্ট মানুষের রাতের বেলায় ঘুমানোর সময় স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। এই স্লিপ অ্যাপনিয়া একটি বড় ধরনের রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত রাতের বেলায় ঘুমের সময় শ্বাস কষ্ট বুকে। আর সেই শ্বাসকষ্ট থেকে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে।
ডায়াবেটিসের সমস্যাঃ
বন্ধুরা ওজন বৃদ্ধির ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে এখনকার সময়ে। যার ফলে আপনাদের বারবার পানির পিপাসা পাবে এবং বারবার মূত্র ত্যাগ করতে হবে। এছাড়া শরীর ও মন ক্লান্ত হয়ে পড়বে, সকল প্রকার খাবার অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়বে। ডায়াবেটিসের কারণে আপনাদের হার্ড ও চোখ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে। তাই এসব বিষয়ের সমাধান পেতে ওজন কমানোর উপায় হিসেবে এগুলো আপনাদেরকে ভালোভাবে জানতে হবে।
ওজন বৃদ্ধির কারণে শুধু শারীরিক সমস্যায় হয়না পর অংশ মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ প্রভাব আপনাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলবে। যার ফলে আপনাদের ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ ইত্যাদির মত আরো নানান মানসিক চাপ সৃষ্টি হবে। এর কারণে আপনাদের স্টক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই উপায় জানার আগে ফলাফলটা অত্যন্ত জরুরী।
আমরা অনেক কিছু জেনেছি, আসলে কোন কিছুই ভালো না সেটা আমরা সবাই জানি তেমনি দেহের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক এবং বিপদজনক। তারাই বেশি ওজন মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। বন্ধুরা এবার চলুন আমরা এই বিপদ থেকে বাঁচার উপায় কি কি আছে জেনে নেই-
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা ওজন কমানোর উপায়
বন্ধুরা ওজন কমানোর উপায় এর সবচেয়ে কার্যকর ও সহজ উপায় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সহজে গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। এছাড়া বেশি পরিমাণে পানি পান করার কারণে শরীর থেকে সকল প্রকার বর্জ্য বের হয়ে যায় এবং চর্বি জমতে পারে না। যে চর্বির কারণে আমাদের শরীরে ওজন বৃদ্ধি পায় সেই চর্বি আস্তে আস্তে পানির সাথে চলে যায়। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি আমাদের এই মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর উপায় হিসাবে আমরা ব্যবহার করতে পারি।
সঠিক সময়ে খাবার ওজন কমানোর উপায়
বন্ধুরা সঠিক খাবার হওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া একজন বেশি ওজন বিশিষ্ট মানুষের প্রয়োজন। সব সময় চেষ্টা করবেন রাত আটটার পরে খাবার না খেতে। রাত আটটার আগে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ হালকা-পাতলা কাজ করে নেবেন। যা কিনা আপনাদের শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে এবং একটি একটি বিশেষ প্রাকৃতিক উপায়।
নিয়মিত হাঁটাচলা করে উপায়
বন্ধুরা ওজন কমানোর জন্য হাঁটাচলার বিকল্প অপরিসীম। এই উপায়ে আপনারা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে 30 থেকে 45 মিনিট হাঁটাচলা করলে আপনাদের দেহের 160 ক্যালোরি পর্যন্ত খরচ হতে পারে। চেষ্টা করবেন আস্তে আস্তে যতদ্রুত সম্ভব হাঁটতে থাকার। যত বেশি দ্রুত হাঁটবেন তত বেশি আপনাদের জন্য ভালো। একাধারে এত সময় যদি আপনাদের কাছে বিরক্তিকর মনে হয় তাহলে আপনাদের কানে হেডফোন লাগিয়ে আপনার পছন্দের জিনিসগুলো শুনতে শুনতে হাঁটতে পারেন। মনে রাখবেন আপনাদের জন্য হাঁটা অনেকটা জরুরী উপায়।

শেষ কথা অতিরিক্ত ওজন আমাদের শরীরের জন্য বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করে এর সমাধান আমাদের চারপাশেই রয়েছে। আপনারা চাইলেই সহজে উপায় গুলোর মাধ্যমে আপনার নিজের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে পারবেন। এজন্য আপনার ধৈর্য এবং নিজের প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকা অত্যন্ত জরুরী।
ওজন কমানোর জন্য টিভিতে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন বা ফার্মেসিতে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ দেখতে পারবেন। এগুলো দেখে আবার উত্তেজিত হয়ে যাবেন না উৎসাহিত হয়ে যাবেন না। কারণ এই ঔষধ গুলো আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে ওজন কমাবে তো দূরের কথা। উল্টো এ ধরনের ঔষ ধ খাওয়ার ফলে আপনার বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। তাই আগে থেকে সতর্ক হয়ে সঠিক উপায় গুলো মেনে চললে আপনার জন্য অধিক কার্যকর ফলাফল দিতে সক্ষম হবে এই উপায়গুলো। এ ছাড়া আপনার প্রয়োজনীয় সব তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের কমেন্ট সেকশনে গিয়ে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য।